দূরের এক গ্রাম, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, মেঘের ছায়া আর হাওয়ার সোঁ সোঁ শব্দে ভরা। সেখানে থাকে লীলা, একদম সাধারণ এক মেয়ে। তার চোখে থাকে আকাশের মতো গভীরতা, আর মুখে এক চিলতে হাসি, যেন সমস্ত কষ্ট ঢেকে রাখে। লীলার সঙ্গী তার প্রিয় ছাগলছানা — নাম তার “বেলা”।
বেলা তার জন্য শুধু একটি পশু নয়, বরং মনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। লীলার বাবা মারা গেছেন বহু বছর আগে, মা কাজের জন্য দূরে যায়। দিনের অধিকাংশ সময় লীলা একাই কাটায়। কিন্তু একদিন বনে কাঠ কুড়োতে গিয়ে আহত অবস্থায় এই ছাগলছানাটিকে পেয়েছিল সে। তার ছোট্ট পা রক্তাক্ত ছিল। লীলা তাকে কোলে তুলে এনে যত্নে সারিয়ে তুলেছিল। সেই দিন থেকেই বেলা যেন লীলার জীবন বদলে দিয়েছে।
প্রতিদিন সকালে লীলা বেলাকে নিয়ে নদীর ধারে যায়। সেখানে বেলা ঘাস খায়, আর লীলা নদীর জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে মৃদু হাসে। মাঝে মাঝে সে বেলাকে গল্প শোনায়— পাহাড়ের ওপারের জাদুর শহর, বা তারা ভরা আকাশের দেশে রাজকন্যার কাহিনি। বেলা যেন মন দিয়ে শোনে, তার কালো চোখে প্রতিফলিত হয় লীলার কল্পনার রঙ।
কিন্তু একদিন গ্রামের হাটে খবর এল, বেলা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আর হয়তো বেশি দিন বাঁচবে না। লীলা সারারাত বেলার পাশে বসে থাকল, মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার, বেলা।”
সকাল হলে, বেলার চোখ আধখোলা, কিন্তু মুখে শান্তি। লীলা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সেই মুহূর্তে তার মনে হল— ভালোবাসা হয়তো চিরকাল থাকে না, কিন্তু তার স্মৃতি মানুষের হৃদয়ে অমলিন থাকে।
আর লীলা জানল, তার জীবনের গল্পে বেলা চিরদিন রয়ে যাবে— এক আঁকিবুঁকি স্কেচের মতো, কিন্তু হৃদয়ের পাতায় খোদাই হয়ে।