এই ছবির মেয়েটির নাম অরুন্ধতী। সে একটি ছোট শহরে থাকে, যেখানে সময় যেন থেমে আছে। মেয়েটির চোখে একটি গভীর বিষণ্ণতা ফুটে উঠেছে, যা যেন তাকে অতীতের কোনো স্মৃতির গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তার হাতে ধরা পাখাটিও যেন তার মনের একান্ত সঙ্গী।
অরুন্ধতী ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। তার পরিবারে খুব বেশি কেউ ছিল না, শুধু মা আর ছোট ভাই। বাবাকে সে হারিয়েছে যখন খুব ছোট ছিল, আর তার মা সংসারের ভার সামলে তাদের দুজনকে বড় করেছে। অরুন্ধতীর মা সবসময় তাকে বলতেন, “মেয়েরা জীবনে অনেক কিছু মেনে নেয়, কিন্তু তাদের মনে একটা স্বপ্ন থাকা উচিত।” এই কথাটা তার মনে খুব গেঁথে গিয়েছিল। সে স্বপ্ন দেখত একটা নতুন জীবনের, যেখানে সে স্বাধীন, যেখানে কোনো বাধা নেই।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অরুন্ধতীর জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। পড়াশোনা শেষ করে সে একটা কাজ খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু ছোট শহরে চাকরি পাওয়া সহজ ছিল না। তার মনের মধ্যে একরাশ হতাশা বাসা বাঁধে। তখন তার দেখা হয় ঋষি নামের এক যুবকের সাথে। ঋষি ছিল স্বপ্নবাজ, সে সবসময় বলত, “জীবনকে আমরা নিজের মত করে গড়ে তুলতে পারি, যদি সাহস করি।” অরুন্ধতীর জীবনে ঋষি যেন এক নতুন আলোর সন্ধান নিয়ে আসে।
কিন্তু সমাজ সবসময়ই তাদের স্বাধীন চিন্তা ও সম্পর্কের উপর নানান বাধা দেয়। অরুন্ধতীর পরিবার ও সমাজের মানুষদের কথা, তাদের নিষেধাজ্ঞা, সব কিছু তাকে ঘিরে ফেলে। একসময় তার উপর মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে সে ঋষির থেকে দূরে সরে যায়। ঋষিও তখন নিজের জীবনের দিকে এগিয়ে চলে, কিন্তু অরুন্ধতীর প্রতি তার একটা অব্যক্ত টান থেকেই যায়।
আজ অনেক বছর পর, অরুন্ধতী এই স্মৃতিগুলোকে মনে করে বসে আছে। তার মুখের উপর বিষণ্ণতার ছায়া। পাখাটির উপর হাত রাখার এই ভঙ্গিমায় তার মনের একান্ত কষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। সে ভাবে, যদি সেই সময় সমাজের কথা না ভেবে নিজের পথে এগিয়ে যেতে পারত, তাহলে হয়তো আজ তার জীবনে সুখের আলোর কিছু ছটা থাকত।
এই গল্পটি শুধু অরুন্ধতীর নয়, এই গল্পটি অনেক নারীর, যারা সমাজের বাধা পেরিয়ে নিজের জীবন গড়তে চেয়েছে কিন্তু কোনো না কোনোভাবে থেমে গিয়েছে। অরুন্ধতী জানে যে তার মনের এই দুঃখ হয়তো কখনোই মুছে যাবে না, কিন্তু তার স্মৃতির মধ্যে সে তার জীবনের সেই মুহূর্তগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে।